লালমনিরহাটের আদিতমারীতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে তৈরি করা আপত্তিকর ভিডিওর জেরে আত্মহত্যা করেছেন সুলতানা পারভীন সোহা (২০) নামের এক নববধূ। বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) বিকেলে আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে আদিতমারী থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে তার পরিবার।
সোহা আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের সিদ্দিক আলীর মেয়ে। মাত্র ১০ মাস আগে তার বিয়ে হয় একই এলাকার জাপানপ্রবাসী আশরাফুল ইসলাম অনিকের সঙ্গে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিয়ের পর সোহা দেশে থাকলেও তার স্বামী অনিক জাপানে ছিলেন এবং স্ত্রীকে জাপানে নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছিল। এর মধ্যেই এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সোহার ছবি দিয়ে একটি আপত্তিকর ভুয়া ভিডিও তৈরি করা হয়। পরিবারের অভিযোগ, এটি তৈরি করেন পর্তুগালপ্রবাসী নাহিন শেখ ওরফে মৃদুল, যিনি অনিকের বোন জামাই এবং এই বিয়ে মেনে নিতে চাননি।
ভুয়া ভিডিওটি প্রথমে সোহাকে, পরে তার স্বামী অনিককেও পাঠানো হয়। এতে নবদম্পতির মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি সৃষ্টি হয় এবং মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন সোহা। গত ৬ এপ্রিল নিজের বাড়িতে আত্মহত্যা করেন তিনি।
আত্মহত্যার আগে সোহা তিন পৃষ্ঠার একটি সুইসাইড নোট রেখে গেছেন, যেখানে অভিযুক্ত হিসেবে সরাসরি নাহিন শেখের নাম উল্লেখ করে ন্যায়বিচারের আবেদন জানান।
সুলতানার মা ফিরোজা বেগম বলেন, “আমার মেয়েকে ওরা শেষ করে দিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।”
সুলতানার ভাই আলিমুল ইসলাম বলেন, “আমরা ওকে বোঝাতে চেষ্টা করেছি, কিন্তু শেষ রক্ষা হলো না। দোষীদের যেন কঠোর শাস্তি হয়।”
জাপান থেকে ভিডিও কলে সোহার স্বামী অনিক বলেন, “আমি তাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলাম। সব প্রস্তুতি সম্পন্ন ছিল। কিন্তু আমার বোন জামাই পরিকল্পনা করে এই ভিডিও তৈরি করে আমাদের সম্পর্ক ধ্বংস করে দিয়েছে। আমি এর বিচার চাই।”
অভিযুক্ত নাহিন শেখের বক্তব্য পাওয়া যায়নি, যদিও তার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়।
আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আলী আকবর বলেন, “প্রথমে একটি অপমৃত্যু মামলা নেওয়া হয়েছিল। বৃহস্পতিবার আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এসেছে। আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা নিচ্ছি।”